ন্যানো টেকনোলজি ২১ শতকের প্রযুক্তি হিসেবে পরিচিত। কিছু ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তির প্রয়োগ এরই মধ্যে আমরা জেনেছি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ ও বিস্তার আরও ব্যাপক হবে এবং এ বিষয়ে নতুন নতুন গবেষণার ক্ষেত্রও তৈরি হবে। এ প্রযুক্তির জন্য যেসব ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে তা হলো শিল্পোৎপাদন, ন্যানো ইলেকট্রনিক্স, বায়োইলেকট্রনিক্স, চিকিৎসা, সামরিক প্রযুক্তি এবং এগ্রিকালচারাল ন্যানো টেকনোলজি। এছাড়া এনার্জি সেক্টর ও ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও এ প্রযুক্তির প্রয়োগ রয়েছে।
ন্যানো মেডিসিন হলো চিকিৎসা ব্যবস্থায় ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ন্যানো ম্যাটেরিয়াল, ইলেকট্রনিক বায়োসেন্সর প্রভৃতির সফল উদ্ভাবন এবং এগুলোর প্রয়োগের মাধ্যমে ন্যানো মেডিসিনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আগামী দিনে এ ক্ষেত্রে মলিকিউলার ন্যানো টেকনোলজির সফল প্রয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে এ প্রযুক্তিতে সমস্যা হলো, ন্যানো ম্যাটেরিয়াল থেকে সৃষ্ট বিষাক্ততা। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে এবং ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের পক্ষ থেকে ন্যানো মেডিসিনের ওপর গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, এ কার্যক্রমের আওতায় ৪টি ন্যানো মেডিসিন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ১৩০টি ন্যানোটেকভিত্তিক ওষুধ এবং এগুলোর সঠিক প্রয়োগ-পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটেছে।
এমনই একটা বিষয় হলো কোষের ত্রুটি মেরামত যন্ত্র বা সেল রিপেয়ার মেশিন। অনেক রোগই যেহেতু কোষের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া বা জিনঘটিত ত্রুটির কারণে ঘটে থাকে, সে জন্য ন্যানো মেডিসিনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ত্রুটিযুক্ত জীবকোষগুলোর ওপর ক্রিয়া করে সেগুলোকে রোগ বিস্তারে নিষ্ক্রিয় করা অথবা উপযুক্ত পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বাভাবিক কার্যকারিতায় ফিরিয়ে আনা। এ লক্ষ্যে ন্যানোসায়েন্স ও ন্যানো টেকনোলজির কৌশলকে কাজে লাগিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে স্বল্পমাত্রার ওষুধ প্রয়োগে অধিক কার্যকর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। মলিকিউলার ন্যানো টেকনোলজির গবেষকরা এ ব্যবস্থা নিয়ে আশাবাদী এবং তারা মনে করেন, এটা ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় একটা বিপ্লব আনবে। ন্যানো মেডিসিনের ক্ষেত্র বেশ ব্যাপক। ২০০৪ সালে প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের ওষুধ বিক্রি হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী কমবেশি ২০০টি কোম্পানির ৩০টির উপরে ওষুধপণ্য বাজারে এসেছে। বর্তমানে এ হার আরও বেশি। ন্যানো টেকনোলজিতে গবেষণা ও উন্নয়নের কাজে প্রতিবছর কমপক্ষে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার ব্যয় হয়। এভাবে ন্যানো মেডিসিন শিল্প ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত হচ্ছে। আশা করা যায়, এটা অর্থনীতিতেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
ন্যানো মেডিসিনের ক্ষেত্র বিস্তৃতির পাশাপাশি এ নিয়ে গবেষকদের আগ্রহও বাড়ছে। ২০০৭ সালে ন্যানো ইলেকট্রনিক ম্যাটেরিয়াল, ন্যানোফ্লুইড ডাইনামিক্স, ন্যানোফ্যাবরিকেশন এবং বায়ো-ন্যানোসিস্টেমের ওপর গবেষণায় অনেক অগ্রগতি ঘটেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ হিসেবে ওষুধ প্রয়োগের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ পদ্ধতিতে চিকিৎসক কোনো রোগের জন্য দেহের নির্দিষ্ট অংশে ওষুধ প্রয়োগ করতে পারেন। এ ধরনের একটা পদ্ধতি হচ্ছে কেমোথেরাপি।ক্যান্সারের মতো মৃত্যুঘাতী রোগেরও চিকিৎসা করা যায় এই থেরাপি দ্বারা।
ন্যানো সায়েন্টিস্টরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এ অবস্থার উন্নতি ঘটবে। লিপিড অথবা পলিমারভিত্তিক ন্যানো পার্টিক্যাল ওষুধ বিদ্যায় পরিবর্তন আনবে। প্রযুক্তি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে অচিরেই এ বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হবে এবং নানাভাবে মানুষ ন্যানো মেডিসিনের সুফল ভোগ করবে। আর এটাই সবার আশাবাদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন