ন্যানো টেকনোলজি ২১ শতকের প্রযুক্তি হিসেবে পরিচিত। কিছু ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তির প্রয়োগ এরই মধ্যে আমরা জেনেছি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ ও বিস্তার আরও ব্যাপক হবে এবং এ বিষয়ে নতুন নতুন গবেষণার ক্ষেত্রও তৈরি হবে। এ প্রযুক্তির জন্য যেসব ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে তা হলো শিল্পোৎপাদন, ন্যানো ইলেকট্রনিক্স, বায়োইলেকট্রনিক্স, চিকিৎসা, সামরিক প্রযুক্তি এবং এগ্রিকালচারাল ন্যানো টেকনোলজি। এছাড়া এনার্জি সেক্টর ও ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও এ প্রযুক্তির প্রয়োগ রয়েছে।
ন্যানো মেডিসিন হলো চিকিৎসা ব্যবস্থায় ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ন্যানো ম্যাটেরিয়াল, ইলেকট্রনিক বায়োসেন্সর প্রভৃতির সফল উদ্ভাবন এবং এগুলোর প্রয়োগের মাধ্যমে ন্যানো মেডিসিনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আগামী দিনে এ ক্ষেত্রে মলিকিউলার ন্যানো টেকনোলজির সফল প্রয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে এ প্রযুক্তিতে সমস্যা হলো, ন্যানো ম্যাটেরিয়াল থেকে সৃষ্ট বিষাক্ততা। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে এবং ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের পক্ষ থেকে ন্যানো মেডিসিনের ওপর গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, এ কার্যক্রমের আওতায় ৪টি ন্যানো মেডিসিন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ১৩০টি ন্যানোটেকভিত্তিক ওষুধ এবং এগুলোর সঠিক প্রয়োগ-পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটেছে।
এমনই একটা বিষয় হলো কোষের ত্রুটি মেরামত যন্ত্র বা সেল রিপেয়ার মেশিন। অনেক রোগই যেহেতু কোষের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া বা জিনঘটিত ত্রুটির কারণে ঘটে থাকে, সে জন্য ন্যানো মেডিসিনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ত্রুটিযুক্ত জীবকোষগুলোর ওপর ক্রিয়া করে সেগুলোকে রোগ বিস্তারে নিষ্ক্রিয় করা অথবা উপযুক্ত পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বাভাবিক কার্যকারিতায় ফিরিয়ে আনা। এ লক্ষ্যে ন্যানোসায়েন্স ও ন্যানো টেকনোলজির কৌশলকে কাজে লাগিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে স্বল্পমাত্রার ওষুধ প্রয়োগে অধিক কার্যকর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। মলিকিউলার ন্যানো টেকনোলজির গবেষকরা এ ব্যবস্থা নিয়ে আশাবাদী এবং তারা মনে করেন, এটা ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় একটা বিপ্লব আনবে। ন্যানো মেডিসিনের ক্ষেত্র বেশ ব্যাপক। ২০০৪ সালে প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের ওষুধ বিক্রি হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী কমবেশি ২০০টি কোম্পানির ৩০টির উপরে ওষুধপণ্য বাজারে এসেছে। বর্তমানে এ হার আরও বেশি। ন্যানো টেকনোলজিতে গবেষণা ও উন্নয়নের কাজে প্রতিবছর কমপক্ষে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার ব্যয় হয়। এভাবে ন্যানো মেডিসিন শিল্প ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত হচ্ছে। আশা করা যায়, এটা অর্থনীতিতেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
ন্যানো মেডিসিনের ক্ষেত্র বিস্তৃতির পাশাপাশি এ নিয়ে গবেষকদের আগ্রহও বাড়ছে। ২০০৭ সালে ন্যানো ইলেকট্রনিক ম্যাটেরিয়াল, ন্যানোফ্লুইড ডাইনামিক্স, ন্যানোফ্যাবরিকেশন এবং বায়ো-ন্যানোসিস্টেমের ওপর গবেষণায় অনেক অগ্রগতি ঘটেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ হিসেবে ওষুধ প্রয়োগের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ পদ্ধতিতে চিকিৎসক কোনো রোগের জন্য দেহের নির্দিষ্ট অংশে ওষুধ প্রয়োগ করতে পারেন। এ ধরনের একটা পদ্ধতি হচ্ছে কেমোথেরাপি।ক্যান্সারের মতো মৃত্যুঘাতী রোগেরও চিকিৎসা করা যায় এই থেরাপি দ্বারা।
ন্যানো সায়েন্টিস্টরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এ অবস্থার উন্নতি ঘটবে। লিপিড অথবা পলিমারভিত্তিক ন্যানো পার্টিক্যাল ওষুধ বিদ্যায় পরিবর্তন আনবে। প্রযুক্তি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে অচিরেই এ বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হবে এবং নানাভাবে মানুষ ন্যানো মেডিসিনের সুফল ভোগ করবে। আর এটাই সবার আশাবাদ।
সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০০৯
মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০০৯
বদলে যাচ্ছে মোবাইল ফোন এর চরিত্র
বদলে যাচ্ছে মোবাইল ফোন এর চরিত্র,কী হবে এর ভবিষ্যত?
মানিব্যাগ হিসেবেঃ জাতিসংঘের টেলিযোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন থেকে পাওয়া তথ্যমতে গত বছরের শেষ নাগাদ বিশ্বে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৪০০ কোটিতে। এর মানে হচ্ছে, পৃথিবীতে গড়ে প্রতি তিন জনের মধ্যে দুই জনই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। আমেরিকায় স্যামসাং মোবাইলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফর স্ট্র্যাটেজি জাস্টিন ডেনিসন। তিনি বলেন, ‘সবখানে মোবাইল ফোন পৌঁছে যাবার বস্তবতাই বলে দিচ্ছে যে, এ যন্ত্রটি মানিব্যাগের জায়গাটি নিয়ে নেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।’
চাবি হিসেবেঃ গবেষকরা বলছেন, আমেরিকায় আগামি পাঁচ বছরের মধ্যে কেবল কল করা বা টেক্সট মেসেজ পাঠানো ছাড়াও মোবাইল ফোন আরো বেশ কয়েকটি কাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। এর মধ্যে রয়েছে অনলাইন এবং ইলেকট্রনিক পেমেন্ট, ডোরলক খোলা, পাতাল রেলে টিকেট কেটে ঢোকা এমনকি কিছু ক্ষেত্রে মালিকের আইডেনটিটি কার্ড হিসেবে ব্যবহার।
মোবাইল ফোন দিয়ে ডোর লক খোলার সিস্টেম চালু করেছে নিউজিল্যান্ডের কিছু হোটেল। গত এক বছর যাবৎ তারা গ্রাহকের মোবাইলে নিয়ার-ফিল্ড টোকনোলজি জুড়ে দিচ্ছেন। কেনিয়াতে মোবাইল ফোন দিয়ে এসএমএস-এর মাধ্যমে টাকা-পয়সা পাঠানোও চলছে পুরোদমেই।
পশ্চিমে, এমনকি আমাদের দেশেও অনেকে পকেটে অন্তত তিনটি জিনিস নিয়েই বাড়ি থেকে বের হন-ঘরের বা অফিসের চাবি, মানিব্যাগ এবং অবশ্যই মোবাইল ফোন। তবে পকেট থেকে মানিব্যাগটিকে তাড়ানোর ষড়যন্ত্র সম্ভবত শুরু হয়ে গেছে। জায়গা ছাড়তে হবে চাবির ছড়াটিকেও। আর এ ঘটনাটি ঘটাবে আপনার মোবাইল ফোন। সে আভাসই দিচ্ছেন প্রযুক্তিগুরুরা।
উল্লিখিত ব্যবহারগুলোর কিছু ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায়। শুনতে খানিকটা অবাক লাগলেও বাস্তবতা হলো মোবাইল টেকনোলজিতে এ দুটি দেশ পেছনে ফেলে দিয়েছে সমর ও প্রযুক্তি পরাশক্তি আমেরিকাকে। প্রায় এক হাজার জনের মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে জাপানের শতকরা প্রায় ১৫ জন মোবাইল ব্যবহারকারী তাদের সেলফোন দিয়েই কেনাকাটার পর মূল্য পরিশোধের কাজটি সারেন। জাপানের দেখাদেখি এমন চেষ্টা আমেরিকাতেও শুরু হয়েছিল ২০০০ সালের দিকে, তবে সেটা তখন তেমন সাফল্য পায়নি।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরেস্টারের সিনিয়র অ্যানালিস্ট এড কুন্টজ মনে করেন, আমেরিকায় এবং অনেক দেশেই মানুষ আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি মোবাইল ফোন নির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে যে প্রচেষ্টা ১০ বছর আগে হালে পানি পায়নি, তা সম্ভবত এখন ঢেউ তুলতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, ‘মোবাইল ফোন দিয়ে সম্ভাব্য কাজের ক্ষেত্র এখন অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি মানুষও এখন মোবাইল ফোন সেটের ডেটা নির্ভর অ্যাপ্লিকেশন যতো বেশি সম্ভব ব্যবহার করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।’
প্রায় কাছাকাছি ভবিষ্যতবাণী করেছে প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার ইনকর্পোরেটেড। তাদের হিসেব মতে, এ বছরের শেষ নাগাদ সারা বিশ্বে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেন শতকরা ৭০ ভাগ বেড়ে তা সাত কোটি ৩০লাখে দাঁড়াবে। ২০১২ সাল নাগদ তা হবে প্রায় ২০ কোটি!
তবে, মোবাইল ফোন নির্ভর লেনদেনের কিছু সম্ভাব্য সমস্যাও রয়েছে। স্যামসাংয়ের জাস্টিন ডেনিসন মন্তব্য করেন, ‘আমরা প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে পারি, আমরা নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করতে পারি, কিন্তু আমেরিকার লোকজন নতুন প্রযুক্তিটি গ্রহণ করবেই এমন সবসময় ঘটে না।’ ইলেকট্রনিক প্রাইভেসি ইনফরমেশন সেন্টারের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর লিলি কনি আরেকটি সম্ভাব্য সমস্যার কথা জানিয়েছেন, মোবাইল ফোন দিয়ে যাদি লেনদেন করা সম্ভব হয়, তবে হাইজ্যাকারদের নজর আগের চেয়ে অনেক বেশিই থাকবে মোবাইল ফোনের দিকে। আর সে মোবাইলটি যদি আইডেনটিটি কার্ডের বিকল্প হয়, তবে সে ছিনতাই হবে চুড়ান্ত রকমের পরিচয় জালিয়াতি বা আইডেনটিটি থেফ্ট!
এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক মন্তব্য করেছে যে, মোবাইল ফোন দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা যথেষ্ট উন্নতমানের করা সম্ভব, তবে প্রশ্ন হলো গ্রাহকরা এর প্রতি তেমনভাবে ঝুঁকবেন কি-না!
মাস্টারকার্ডের মোবাইল পেমেন্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধান সায়মন পুগ আরেকটি সমস্যার কথা বলছেন- মোবাইল ফোনে নতুন প্রযুক্তি যোগ করা এবং তা বিভিন্ন দোকান পর্যন্ত পৌছানোর খরচটি কে দেবে?
মোবাইল ফোনে টাকাপয়সার হিসেব ঢোকানোর প্রযুক্তি ইতোমধ্যে তৈরি করে ফেলেছে নিয়ার-ফিল্ড কমিউনিকেশন নামের একটি কোম্পানি। কাজেই একটি মোবাইল ফোন সেটে যদি নিয়ার-ফিল্ড প্রযুক্তি জুড়ে দেয়া থাকে, তবে একজন ক্রেতা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য মোবাইলে ভরে নিতে পারবেন। এরপর তিনি দোকানে গিয়ে যেভাবে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে জিনিসপ্রত্র কেনেন, সেভাবেই কিনতে পারবেন হাতের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। আর এ বিষয়টিই যথেষ্ট একসাইটিং মনে হচ্ছে ব্যাংক অফ আমেরিকার হেড অফ মোবাইল প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ডৌগ ব্রাউনের। ‘আরে, আপনার কাগুজে নোটের কি দরকার? মানিব্যাগেরও কোনো দরকার নেই। কাগুজে ডলারের দিন শেষ! আমরা কি কাড়ি কাড়ি বান্ডেল নোটের ঝামেলা প্লাস্টিকের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলিনি?’ তিনি আরো এক ধাপ এগিয়ে মন্তব্য করেন, ‘মোবাইলে ছোট একটি স্ক্যানারও জুড়ে দেয়া সম্ভব, যেটি ফিঙ্গার প্রিন্ট বা চোখের আইরিস প্রিন্ট নিতে পারবে। এতে করে মোবাইল ছিনতাই করেও শেষপর্যন্ত কোনো লাভ হবে না।
তবে আমেরিকায় নতুন অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে নতুন প্রযুক্তি কতোটা সাফল্য পাবে তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। পাশাপাশি এটাও ঠিক যে, অনেক কোম্পানিই একাধিক ক্রেডিট কার্ট, পেট মোটা মানিব্যাগ আর নোটের তাড়া থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছে।
তথ্যসূত্রঃ সিএনএন
মানিব্যাগ হিসেবেঃ জাতিসংঘের টেলিযোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন থেকে পাওয়া তথ্যমতে গত বছরের শেষ নাগাদ বিশ্বে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৪০০ কোটিতে। এর মানে হচ্ছে, পৃথিবীতে গড়ে প্রতি তিন জনের মধ্যে দুই জনই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। আমেরিকায় স্যামসাং মোবাইলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফর স্ট্র্যাটেজি জাস্টিন ডেনিসন। তিনি বলেন, ‘সবখানে মোবাইল ফোন পৌঁছে যাবার বস্তবতাই বলে দিচ্ছে যে, এ যন্ত্রটি মানিব্যাগের জায়গাটি নিয়ে নেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।’
চাবি হিসেবেঃ গবেষকরা বলছেন, আমেরিকায় আগামি পাঁচ বছরের মধ্যে কেবল কল করা বা টেক্সট মেসেজ পাঠানো ছাড়াও মোবাইল ফোন আরো বেশ কয়েকটি কাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। এর মধ্যে রয়েছে অনলাইন এবং ইলেকট্রনিক পেমেন্ট, ডোরলক খোলা, পাতাল রেলে টিকেট কেটে ঢোকা এমনকি কিছু ক্ষেত্রে মালিকের আইডেনটিটি কার্ড হিসেবে ব্যবহার।
মোবাইল ফোন দিয়ে ডোর লক খোলার সিস্টেম চালু করেছে নিউজিল্যান্ডের কিছু হোটেল। গত এক বছর যাবৎ তারা গ্রাহকের মোবাইলে নিয়ার-ফিল্ড টোকনোলজি জুড়ে দিচ্ছেন। কেনিয়াতে মোবাইল ফোন দিয়ে এসএমএস-এর মাধ্যমে টাকা-পয়সা পাঠানোও চলছে পুরোদমেই।
পশ্চিমে, এমনকি আমাদের দেশেও অনেকে পকেটে অন্তত তিনটি জিনিস নিয়েই বাড়ি থেকে বের হন-ঘরের বা অফিসের চাবি, মানিব্যাগ এবং অবশ্যই মোবাইল ফোন। তবে পকেট থেকে মানিব্যাগটিকে তাড়ানোর ষড়যন্ত্র সম্ভবত শুরু হয়ে গেছে। জায়গা ছাড়তে হবে চাবির ছড়াটিকেও। আর এ ঘটনাটি ঘটাবে আপনার মোবাইল ফোন। সে আভাসই দিচ্ছেন প্রযুক্তিগুরুরা।
উল্লিখিত ব্যবহারগুলোর কিছু ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায়। শুনতে খানিকটা অবাক লাগলেও বাস্তবতা হলো মোবাইল টেকনোলজিতে এ দুটি দেশ পেছনে ফেলে দিয়েছে সমর ও প্রযুক্তি পরাশক্তি আমেরিকাকে। প্রায় এক হাজার জনের মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে জাপানের শতকরা প্রায় ১৫ জন মোবাইল ব্যবহারকারী তাদের সেলফোন দিয়েই কেনাকাটার পর মূল্য পরিশোধের কাজটি সারেন। জাপানের দেখাদেখি এমন চেষ্টা আমেরিকাতেও শুরু হয়েছিল ২০০০ সালের দিকে, তবে সেটা তখন তেমন সাফল্য পায়নি।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরেস্টারের সিনিয়র অ্যানালিস্ট এড কুন্টজ মনে করেন, আমেরিকায় এবং অনেক দেশেই মানুষ আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি মোবাইল ফোন নির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে যে প্রচেষ্টা ১০ বছর আগে হালে পানি পায়নি, তা সম্ভবত এখন ঢেউ তুলতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, ‘মোবাইল ফোন দিয়ে সম্ভাব্য কাজের ক্ষেত্র এখন অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি মানুষও এখন মোবাইল ফোন সেটের ডেটা নির্ভর অ্যাপ্লিকেশন যতো বেশি সম্ভব ব্যবহার করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।’
প্রায় কাছাকাছি ভবিষ্যতবাণী করেছে প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার ইনকর্পোরেটেড। তাদের হিসেব মতে, এ বছরের শেষ নাগাদ সারা বিশ্বে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেন শতকরা ৭০ ভাগ বেড়ে তা সাত কোটি ৩০লাখে দাঁড়াবে। ২০১২ সাল নাগদ তা হবে প্রায় ২০ কোটি!
তবে, মোবাইল ফোন নির্ভর লেনদেনের কিছু সম্ভাব্য সমস্যাও রয়েছে। স্যামসাংয়ের জাস্টিন ডেনিসন মন্তব্য করেন, ‘আমরা প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে পারি, আমরা নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করতে পারি, কিন্তু আমেরিকার লোকজন নতুন প্রযুক্তিটি গ্রহণ করবেই এমন সবসময় ঘটে না।’ ইলেকট্রনিক প্রাইভেসি ইনফরমেশন সেন্টারের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর লিলি কনি আরেকটি সম্ভাব্য সমস্যার কথা জানিয়েছেন, মোবাইল ফোন দিয়ে যাদি লেনদেন করা সম্ভব হয়, তবে হাইজ্যাকারদের নজর আগের চেয়ে অনেক বেশিই থাকবে মোবাইল ফোনের দিকে। আর সে মোবাইলটি যদি আইডেনটিটি কার্ডের বিকল্প হয়, তবে সে ছিনতাই হবে চুড়ান্ত রকমের পরিচয় জালিয়াতি বা আইডেনটিটি থেফ্ট!
এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক মন্তব্য করেছে যে, মোবাইল ফোন দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা যথেষ্ট উন্নতমানের করা সম্ভব, তবে প্রশ্ন হলো গ্রাহকরা এর প্রতি তেমনভাবে ঝুঁকবেন কি-না!
মাস্টারকার্ডের মোবাইল পেমেন্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধান সায়মন পুগ আরেকটি সমস্যার কথা বলছেন- মোবাইল ফোনে নতুন প্রযুক্তি যোগ করা এবং তা বিভিন্ন দোকান পর্যন্ত পৌছানোর খরচটি কে দেবে?
মোবাইল ফোনে টাকাপয়সার হিসেব ঢোকানোর প্রযুক্তি ইতোমধ্যে তৈরি করে ফেলেছে নিয়ার-ফিল্ড কমিউনিকেশন নামের একটি কোম্পানি। কাজেই একটি মোবাইল ফোন সেটে যদি নিয়ার-ফিল্ড প্রযুক্তি জুড়ে দেয়া থাকে, তবে একজন ক্রেতা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য মোবাইলে ভরে নিতে পারবেন। এরপর তিনি দোকানে গিয়ে যেভাবে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে জিনিসপ্রত্র কেনেন, সেভাবেই কিনতে পারবেন হাতের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। আর এ বিষয়টিই যথেষ্ট একসাইটিং মনে হচ্ছে ব্যাংক অফ আমেরিকার হেড অফ মোবাইল প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ডৌগ ব্রাউনের। ‘আরে, আপনার কাগুজে নোটের কি দরকার? মানিব্যাগেরও কোনো দরকার নেই। কাগুজে ডলারের দিন শেষ! আমরা কি কাড়ি কাড়ি বান্ডেল নোটের ঝামেলা প্লাস্টিকের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলিনি?’ তিনি আরো এক ধাপ এগিয়ে মন্তব্য করেন, ‘মোবাইলে ছোট একটি স্ক্যানারও জুড়ে দেয়া সম্ভব, যেটি ফিঙ্গার প্রিন্ট বা চোখের আইরিস প্রিন্ট নিতে পারবে। এতে করে মোবাইল ছিনতাই করেও শেষপর্যন্ত কোনো লাভ হবে না।
তবে আমেরিকায় নতুন অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে নতুন প্রযুক্তি কতোটা সাফল্য পাবে তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। পাশাপাশি এটাও ঠিক যে, অনেক কোম্পানিই একাধিক ক্রেডিট কার্ট, পেট মোটা মানিব্যাগ আর নোটের তাড়া থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছে।
তথ্যসূত্রঃ সিএনএন
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)